বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের ফেরানোর চেষ্টা

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পলাতক পাঁচ খুনির ফাঁসির রায় কার্যকর না করা পর্যন্ত তাঁদের খুঁজে বের করে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা চলবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল বৃহস্পতিবার এক ভিডিও বার্তায় আইনমন্ত্রী এ কথা জানান। এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনও পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে আনার এবং মুজিববর্ষে অন্তত একজন খুনিকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু সেনা সদস্যদের হাতে নির্মমভাবে সপরিবারে খুন হন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দায়ে বর্তমানে পাঁচ খুনি ফাঁসির দণ্ড নিয়ে পালিয়ে আছেন। এর মধ্যে রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে এবং নূর চৌধুরী কানাডায় অবস্থায় করছেন। এ ছাড়া শরিফুল হক ডালিম, কর্নেল রশীদ, রিসালদার মুসলেহউদ্দীন বিভিন্ন দেশে পলাতক রয়েছেন। গত ৬ এপ্রিল দিবাগত রাত ৩টার দিকে মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বর এলাকা থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদকে গ্রেপ্তার করে। তিনি এত দিন ভারতে পালিয়ে ছিলেন। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে তাঁর রহস্যময় ফেরা ও গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। মুসলেহউদ্দীনকে নিয়ে গুঞ্জন থাকলেও তাঁকে গ্রেপ্তারের আনুষ্ঠানিক কোনো তথ্য নেই।

আইনমন্ত্রী গতকাল বলেন, ‘সাংবাদিক ভাইয়েরা জিজ্ঞাসা করেছেন, বঙ্গবন্ধুর যে খুনিদের রায় এখনো কার্যকর করা যায়নি এবং যাঁরা পলাতক আছেন তাঁদের ব্যাপারে আমরা কী কী পদক্ষেপ নিয়েছি। সেই ক্ষেত্রে আমি বলতে পারি, কানাডায় নূর চৌধুরী পলাতক আছেন। তিনি কানাডীয় সরকারকে বলেছেন, বাংলাদেশে তাঁকে একটি মামলায় ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। কানাডীয় সরকারের একটি আইন আছে, যেটা হচ্ছে যে দেশে মৃত্যুদণ্ড আছে সেখানে মৃত্যুদণ্ড হতে পারে—এ রকম কোনো আসামিকে তারা ফেরত পাঠায় না। সেই আবেদনের কারণে তিনি সেখানে বসবাসরত আছেন।’

তিনি বলেন, ‘তিনি (নূর চৌধুরী) কানাডীয় সরকারের কাছে কী লিখেছেন এবং কী কারণে তাঁকে সেখানে থাকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সেগুলো জানার জন্য আমরা কানাডীয় সরকারের কাছে সেই কাগজপত্রগুলো চেয়েছিলাম। কানাডীয় সরকার জবাব দিয়েছে যে তাদের প্রাইভেসি অ্যাক্টে এ কাগজগুলো দেওয়া যায় না। তখন আমরা সেখানে আইনজীবী নিয়োগ করে আদালতে আবেদন করেছিলাম। আদালত বলেছেন, এই কাগজগুলো দেওয়া যাবে। তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এখন অগ্রসর হচ্ছি।’

যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়া রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠাতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করণীয় ঠিক করতে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল সম্প্রতি রাশেদ চৌধুরীর মামলার নথি চেয়ে পাঠিয়েছেন। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘সেই ব্যাপারে এখন যে পরিস্থিতি হয়েছে, সেটা অবজার্ভ (পর্যবেক্ষণ) করছি এবং এর অগ্রগতির ব্যাপারে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’

আনিসুল হক বলেন, ‘আর বাকি তিনজনের ব্যাপারে তাদের অবস্থান সম্বন্ধে জানি না, কিন্তু আমাদের অনুসন্ধান চলছে। আমরা মনে করি, আমাদের এই প্রচেষ্টায় সাফল্য লাভ করবে।’